এস.কে খগেশপ্রতি চন্দ্র খোকন,লামাঃ
পার্বত্য লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালীর দুর্গম মুরুংঝিরি থেকে পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অবশেষে ৩ দিন পর লামায় অপহৃত ২৬ জন রাবার শ্রমিককে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারী) সকালে তাদেরকে কক্সবাজারের ঈদগাও সীমানার জঙ্গলে ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানা গেছে।
মুক্তি পাওয়া শ্রমিকরা সবাই অসুস্থ পড়েছেন। কারণ, সন্ত্রাসীরা তাদের অপহৃত করে শারীরিক নির্যাতন করেছে।
মুক্তি পাওয়া শ্রমিকদের কক্সবাজারের ঈদগাঁহসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের মুরুং ঝিরি থেকে ২৬ জন রাবার শ্রমিককে অপহরণ করে নিয়ে যায় সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। এ খবর পাওয়ার পরেই পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। সোমবার বিকালে জিয়াউর রহমান নামের একজন রাবার শ্রমিককে অপহরণের রাতে মারধর করে পাহাড় থেকে ঝিরিতে ফেলে দিলে এ সুবাধে পালিয়ে আসে।
বাকী ২৬ জনকে তারা অপহৃত করে রাখে। মঙ্গলবার সকালে সবাইকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে।
যে সব রাবার শ্রমিকরা অপহৃত উদ্ধার হয়েছে- ১। মোঃ ফারুক (২৬), পিতা-মোঃ আলম, সাং-বড়ইচর, ২। মোঃ আইয়ুব আলী (২৬), পিতা-সৈয়দ হোসেন, সাং-আলীক্ষং, ধুইল্লাঝিরি, ৩। মোঃ সিদ্দিক (৪০), পিতা-অজ্ঞাত, ৪। মোঃ আব্দুল খালেক (২০), পিতা-সিদ্দিক, ৫। আব্দুল মাজেদ (১৭), পিতা-সিদ্দিক, সর্ব সাং-ক্যাংগারবিল, সর্ব বাইশারী ইউপি, থানা-নাইক্ষ্যংছড়ি, জেলা-বান্দরবান৬। মনিরুল ইসলাম (৩০), পিতা-মোঃ আলী আহম্মদ, সাং-নারিছবুনিয়া, ৮নং ওয়ার্ড, ৭। জিয়াউর রহমান (৪৫), পিতা-রশিদ মিয়া, ৮। মোঃ মোবারক (২৫), পিতা-মোক্তার আহম্মদ, সাং-ক্যাঙ্গারবিল, ৯। মোঃ হারুন (৩০), পিতা-মোঃ হাসেম, সাং-দক্ষিণ বাইশারী, ৭নং ওয়ার্ড, ১০। রমিজ উদ্দিন (৩০), পিতা-অজ্ঞাত, সাং- নারিছবুনিয়া, ৮নং ওয়ার্ড, ১১। সৈয়দ নুর (২৮), পিতা-নুরুল হক , সাং-বাইশারী, ৯নং ওয়ার্ড, ১২। মোঃ কায়ছার (৩৮),পিতা- আনছার আলী, ১৩। মোঃ মনির হোসেন (৩৫), পিতা-লাল মিয়া,১৪। মোঃ ইমরান (১৭), পিতা-আফসার আলী, সর্ব সাং- আলীক্ষ্যং, ৩নং ওয়ার্ড, সর্ব থানা-নাইক্ষ্যংছড়ি, জেলা-বান্দরবান, ১৫। মঞ্জর (৩০), পিতা-মোঃ আমির আলী, উভয় সাং-থোয়াইঙ্গাকাটা, ১৬। আফসার আলী (২৫), পিতা-ওমর আলী, সাং-গর্জনিয়া, ছাগলকাটা, সর্ব থানা-রামু, জেলা- কক্সবাজার, ১৭। মোঃ খাইরুল আমিন (৩০), পিতা-অজ্ঞাত, সাং-রোহিঙ্গাক্যাম্প,১৮। মোঃ আবু বক্কর (২৯), পিতা- আজিজুর রহমান, সাং-বড়বিল গর্জনিয়া, ১৯। মোঃ আঃ রাজ্জাক (৩৩), পিতা-বেদার ফকির, সাং- ঈদগাহ, ২০। মবিন (২৫), পিতা-মৃত নুর মোহাম্মদ, সাং-বড়বিল (সিকদার পাড়া), ঈদগড় ইউপি, সর্ব থানা-রামু, সর্ব জেলা- কক্সবাজার। বাকী সাতজনের নাম পাওয়া যায়নি।
যে সব রাবার বাগান থেকে শ্রমিকরা অপহৃত হয় - ১। মোঃ ফোরকান আহমেদ (৪৮), পিতা-হাজী মমতাজ আহমেদ, / শাহজাহান যৌথ মালিক, সাং-ঈদগড়, লেইঙ্গাপাড়া, (বাগানের নামঃ মুরংছড়ি বাগান), ২। নুর মোহাম্মদ (৩২), পিতা-আলী আকবর, সাং-পূর্ব রাজঘাট, ০১নং ঈদগড় ইউপি, উভয় থানা-রামু, জেলা-কক্সবাজার, (বাগানের নামঃ নুর মোহাম্মদ কোম্পানী)
৩। আহসান উল্লাহ (৩৫), পিতা-হাজী আবু তাহের মিয়া, সাং-পূর্ব রাজঘাট, ০১নং ঈদগড় ইউপি, উভয় থানা-রামু, জেলা- কক্সবাজার, (বাগানের নামঃ আহসান উল্লাহ কোম্পানী) ৪। মোঃ হুমায়ুন (৪৫), পিতা- আলী আহমেদ, সাং-করলিয়ামুরা, ঈদগড় ইউপি, সর্ব থানা-রামু,. জেলা-কক্সবাজার, (বাগানের নামঃ হুমায়ুন কোম্পানী) ৫। মোঃ আজিজুল হক (৩৮), পিতা-মৃত আলী মিয়া,. সাং-নারিজবুনিয়া, ৮নং ওয়ার্ড, বাইশারী ইউপি, থানা-নাইক্ষ্যংছড়ি, জেলা-বান্দরবান (বাগানের নামঃ সোনামিয়া রাবার কোম্পানী)
৬। আবুল কালাম (২৮), পিতা-আব্দুল মুনাফ,চ সাং-নারিজবুনিয়া, ৮নং ওয়ার্ড, বাইশারী ইউপি, থানা-নাইক্ষ্যংছড়ি, জেলা-বান্দরবান।
রাবার বাগানের মালিক মো. ফোরকান সাংবাদিকদের জানান, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কোন অগ্রগতি না দেখে তারা মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের শ্রমিককে ছাড়িয়ে আনেন। তার বাগানের ১২ জনকে মুক্ত করতে ৩ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। অন্য ৫ বাগানের মালিকরাও একইভাবে মুক্তিপণ দিয়ে তাদের শ্রমিকদের ছাড়িয়ে আনেন।
লামা থানা অফিসার ইনচার্জ মো. শাহাদাৎ হোসেন জানিয়েছেন, অপহৃত শ্রমিকদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে, মুক্তিপণ দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে বলে শুনেছি। কতো টাকা মুক্তিপণ দিতে হয়েছে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা জানতে পারিনি।