বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার শামুক ঝর্ণা দেখতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া তিন পর্যটকের মধ্যে দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত বুধবার (১১ জুন) ২২ জনের একটি পর্যটক দল শামুক ঝর্ণা দেখতে গিয়ে আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের কবলে পড়ে নিখোঁজ হন তিনজন। এর মধ্যে গতকাল ১২ জুন, ২০২৫ ভোর ৪টায় ফরেস্ট অফিস ঘাটে শেখ জুবাইরুল ইসলামের (২৭) লাশ পাওয়া যায়। এ ছাড়া শুক্রবার (১৩ জুন, ২০২৫) সকাল ১০টায় উপজেলার তৈন খাল এলাকার আমতলী ঘাট থেকে স্মৃতি আক্তার (২০) নামের নিখোঁজ হওয়া আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনো ট্যুর গ্রুপের কো-হোস্ট মোঃ হাসান চৌধুরী শুভ (২৯) নিখোঁজ রয়েছেন।
উদ্ধার হওয়া স্মৃতি আক্তার ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার মোঃ হাবিবুর রহমান ও রুপিয়া আক্তারের কন্যা। তার লাশ সফরসঙ্গী পর্যটকরা শনাক্ত করেছেন।
এদিকে, আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মুমিন জানিয়েছেন, নিখোঁজ পর্যটকের খোঁজে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আলীকদম থানা সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া স্মৃতি আক্তারের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
দুই পর্যটকের উলঙ্গ অবস্থায় উদ্ধারের ঘটনার জনমনে নানাবিধ রহস্যের প্রশ্ন বাঁধছে। গত ০৯জুন২০২৫ তারিখে ৩৩ সদস্যের একটি পর্যটক দল “ট্যুর এক্সপার্ট গ্রুপ” এর মাধ্যমে আলীকদম উপজেলায় আসে। এই ট্যুর গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন বর্ষা আক্তার। ১১ জুন ৩৩ জনের দলটি দুটি দলে ভাগ হয়ে যায়। এর মধ্যে একটি দল ক্রিসতং অভিযানে যায় এবং ২২ জনের অপর দলটি উপজেলার তৈন খাল এলাকার শামুক ঝিরি ঝর্ণা দেখতে যায়। ঝর্ণা দেখতে গিয়েই আকস্মিক ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড়ি ঝিরিতে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়। আর এই পাহাড়ি স্রোতের কবলে পড়েই নিখোঁজ হন তিন পর্যটক। তবে, এই তিনটি পর্যটকের মৃত্যু নিছকই কাকতালীয় কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সূত্র জানাগেছে, গত ২০২২ সালের ১২ আগস্ট আলীকদম উপজেলার তৈনখাল এলাকার সাইংপ্রা ঝর্ণা দেখতে গিয়ে মোহাম্মদ আতাহার ইসরাক রাফি নামে এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছিল। আশ্চর্যজনক ভাবে, সে সময় রাফির স্ত্রী বর্ষা আক্তার ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এই বর্ষা আক্তারই এবারের ৩৩ জনের ট্যুর গ্রুপের মূল অ্যাডমিন। প্রশ্ন উঠছে, কেন দুটি ঘটনাই বর্ষা আক্তারের গ্রুপের সাথে ঘটলো? এ ঘটনায় স্যোশাল মিডিয়া ও জনমনে বিভিন্ন রহস্যজনক প্রশ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
অন্যদিকে আলীকদম থানায় উপস্থিত হওয়া ১৯ জন পর্যটকের দেওয়া ভাষ্য অনুযায়ী ৩৩ জন পর্যটকের জন্য মাত্র একজন ট্যুরিস্ট গাইড ছিলেন, যার নাম সিদ্ধার্থ তঞ্চঙ্গ্যা। ঘটনার তিন দিন পরও সিদ্ধার্থ তঞ্চঙ্গ্যা কেন থানায় হাজির হতে পারেননি তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে সবচেয়ে বেশি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে উদ্ধার হওয়া দুটি মরদেহ সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় ছিলো। এ কারণে প্রশ্ন উঠছে, পাহাড়ি ঝিরি বা খালের প্রবল স্রোত থাকলেও তা কি মরদেহকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে ফেলতে পারে? এ কারণে অনেকে মনে করছেন, এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য থাকতে পারে। এ কারণ নিঁখুত তদন্ত করা দরকার।
বিষয়টি নিয়ে আলীকদম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মির্জা জহির উদ্দীন বলেন, পাহাড়ি ঝিরি-খালে প্রবল স্রোত গাছপালা ও পাথর থাকে। হতে পারে প্রবল স্রোতের তোড়ে র কারণে মরদেহ গুলো বিবস্ত্র হয়ে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, নানাবিধ বিযয় চিন্তা করে তদন্ত অব্যাহত থাকবে। মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক কারণ ছাড়া অন্য কোনো কারণ থাকলে তা ময়না তদন্তে উঠে আসবে।
আলীকদমের সচেতন মানুষ মনে করেন, পর্যটকদের একের পর এক এই ধরনের মৃত্যু এবং এর সাথে জড়িত নানা প্রশ্ন স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটন শিল্পের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনা গুলোর রহস্য উন্মোচন এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।