এস.কে খগেশপ্রতি চন্দ্র খোকন, লামাঃ
বিদ্যালয় প্রতিষ্টার ৬ বছরের মাথায় বান্দরবানের লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ইব্রাহীম লীডারপাড়া অজপাড়া গাঁয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে উপজেলার সুনাম অর্জন করেছে “লামা স্বপ্নকানন বিদ্যাপীঠ”।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এডভোকেট মামুন মিয়া বলেন, ২০১৯ সালে এ দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় বসবাসরত পাহাড়ী- বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর শিশুদের মাঝে উন্নত শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ৬ষ্ট শ্রেণী দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞান বিভাগ, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ ও মানবিক বিভাগ নিয়ে বর্তমানে স্কুলটি এসএসসি শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করা হচ্ছে।
বিদ্যাপীঠটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে নিয়মিত ইংলিশ স্পোকেন ক্লাস ও নিয়মিত সুন্দর হাতের লেখার ক্লাস, সপ্তাহ ব্যাপী পাঠদানের মূল্যায়ন পরীক্ষা, বিতার্কিক টিম, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস , বিতর্ক, ডিসপ্লে, স্কাউট ক্লাসের সুবিধা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২৫ সালে প্রথম এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে। প্রথম পরীক্ষায় পাশের হার ৮১শতাংশ। লামা স্বপ্নকানন বিদ্যাপীঠটি স্থাপিত হয় ২০১৯সালে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানাগেছে, ২০২০ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ৮৪ জন শিক্ষার্থী দিয়ে স্কুল শুরু হয়।
বর্তমান এ বিদ্যাপীঠে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩১১ জন। ৬ষ্ঠ – ৮৪ জন, ৭ম -৬৮ জন, ৮ম -৬৮ জন, ৯ম – ৫৪ জন এবং ১০ম শ্রেনীতে – ৩৭ জন।
লামা স্বপ্নকানন বিদ্যাপীঠপর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক আপেল বড়ুয়া বলেন, এস এস সি ২০২৫ পরীক্ষার ফলাফল ৩৭ জনের মধ্যে ৩০ জন পাশ। পাশের হার- ৮১ শতাংশ। ফলাফল যথাক্রমেঃ A: ১৪ জন, A-: ৭ জন, B: ৬ জন,C: ৩ জন। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৩ শত ১১ জন শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত আছে। ১২ জন তরুণ এবং মেধাবী প্রশিক্ষিত শিক্ষকরা তাদেরকে পাঠদান করাচ্ছেন। এ বিদ্যালয়টি মূলত অজপাড়া গাঁয়ে। এর চারপাশে মাধ্যমিক লেভেলের অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। প্রতিষ্ঠাতা ফাউন্ডারদের আর্থিক সহযোগিতা ও ছাত্র- ছাত্রীদের যৎসামান্য বেতনে স্কুলটি পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠারা প্রতি বছরই বিনাস্বার্থে স্কুলের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করে আসছেন। আমরা আশা করি খুব শীঘ্র স্কুলটি উপজেলার গণ্ডি পেরিয়ে বান্দরবান জেলার একটা অন্যতম স্কুলে উপনীত হবে। স্কুলে বর্তমানে যে পরিমাণে শিক্ষার্থী রয়েছে তা এই ভবনে সংকুলান হচ্ছে না। টিনের বেড়া আর টিনের ছাউনি দিয়ে নির্মিত রুমে ক্লাস চলছে। রয়েছে বিদ্যালয়ের জন্য জায়গা সংকট।আর্থিক সংকটের কারণে বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষ বাড়ানো যাচ্ছেনা। এ সময় তিনি আরো বলেন, স্কুলটি আধুনিক ও আরও স্মার্ট স্কুল করতে যেসকল কাজগুলো করা দরকার যেমন মাল্টিমিডিয়া ক্লাস, বিজ্ঞানাগার সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছু চালু করতে পারছি না। যদি এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তিরা স্কুলের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতো অথবা রাষ্ট্র কর্তৃক কোন অনুদান পাওয়া গেলে স্কুলটি আরও আধুনিক ও স্মার্ট স্কুল করে জেলার অন্যতম স্কুলে উপনীত করা সম্ভব হবে।”
এছাড়াও স্কুলটি অন্যান্য স্কুল থেকে যে কারণে ব্যতিক্রম: স্কুলের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে নিম্নরূপ: গাছ গাছালির ছায়াঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে নিজস্ব টিনসেড ক্যাম্পাসে পাঠদানের ব্যবস্থা।আধুনিক, বিজ্ঞান, নৈতিকতা ও কর্মমুখীতার সমন্বয়ে যুগোপযোগী পাঠাদান।বিষয় ভিত্তিক যোগ্য, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক মণ্ডলীর দ্বারা পাঠদান।সরকারি কারিকুলামের যথাযথ অনুসরণ। আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে পরিচালিত শারীরিক শিক্ষা ও নিয়মিত খেলাধুলার সু ব্যবস্থা। নিয়মিত সাপ্তাহিক ও মাসিক পরীক্ষার ব্যবস্থা। সৃজনশীল পদ্ধতিতে ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শিখানো হয়। নিয়মিত অভিভাবক যোগাযোগ ও তিনমাস অন্তর অন্তর অভিভাবক সমাবেশ।শিক্ষা সফর ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা। স্কুলের নিয়ম ও শৃঙ্খলা, ইউনিফর্ম, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা বাধ্যতামূলক।
অভিভাবক সমাবেশ সম্পন্নঃ
গত ২১ আগষ্ট সম্পন্ন হয় লামা স্বপ্নকানন বিদ্যাপীঠ এর অভিভাবক সমাবেশ। শতভাগ অভিভাবকের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশে যে সব গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে তা নিন্মরূপ তুলে ধরা হলো-
অভিভাবক সমাবেশে বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিকাশ ও শিক্ষার মান উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই সমাবেশ শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে একটি কার্যকর যোগাযোগ তৈরি করবে, যেখানে শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপন হবে। অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অগ্রগতি ও আচরণগত সমস্যা সম্পর্কে ধারণা পান এবং বিদ্যালয়ে তাদের করণীয় সম্পর্কে জানতে পারেন। এটি শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ ও সফল ছাত্র হতে সাহায্য করে, যা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়।
অভিভাবকরা জানান, বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশের শিক্ষার মান উন্নয়ন, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে সাহায্য করছে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা দূর করা সহজ হচ্ছে। তারা আরো জানান,
সমন্বিত প্রচেষ্টায় শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে একটি কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করছে। যা শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিকাশ নিশ্চিত হচ্ছে। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে এই সমাবেশে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও আচরণগত সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং এর সমাধানের জন্য একটি কার্যকরী পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।
এ ছাড়া অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় অমনোযোগিতা বা অন্যান্য কুফল সম্পর্কে ধারণা পান, যা তাদের সন্তানের প্রতি আরও সজাগ হতে সাহায্য করে।
অভিভাবক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন
স্বাগত বক্তব্য রাখেন আপেল বড়ুয়া [প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ]। প্রধান আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন, এডভোকেট মামুন মিয়া[প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ,ডিরেক্টর বোর্ড ও বর্তমান বোর্ড]।
এ ছাড়া, মো:ইয়ামিন হোসেন [প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান বোর্ড,ডিরেক্টর বোর্ড], অভিভাবক থেকে বক্তব্য রাখেন- সুপন বড়ুয়া,খলিলুর রহমান,আমেনা খাতুন,রাবিয়া আক্তার বক্তব্য রাখেন।