এস.কে খগেশপ্রতি চন্দ্র খোকন, পাহাড়ের কন্ঠস্বর ডেস্ক(৩১ আগস্ট ২০২৫)ঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) কেন্দ্রীয় কমিটি ও হল সংসদসমূহের নির্বাচন ২০২৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। ডাকসু নির্বাচনে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই আদিবাসী কন্যা রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা ও সুর্মী চাকমা। রুপাইয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে, আর সুর্মী লড়ছেন কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে।
২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের ছাত্ররাজনীতিতে এটি হবে প্রথম বৃহৎ নির্বাচনী আয়োজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (সংক্ষেপে: ডাকসু হিসেবে পরিচিত) হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। এটি ১৯২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়।পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে পূর্বনাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’ গ্রহণ করা হয়। ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সংসদ বলা হয়। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার হল এই ছাত্র সংসদ। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই বাংলাদেশের সামগ্রিক ইতিহাসে গৌরবময় ভূমিকা রাখে এই ছাত্র সংসদ। ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান, ৭১-এর স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচার ও সামরিকতন্ত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে সাহায্য করেছে ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ।
রুপাইয়ার নির্বাচনী পরিকল্পনা-
রুপাইয়া গত ২৬ আগস্ট নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেন। তাঁর ঘোষিত ১২ দফার মধ্যে রয়েছে-
১. প্রতিটি অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আলাদা ক্যারিয়ার কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন (সিভি রাইটিং, প্রেজেন্টেশন দক্ষতা, এআই, ডেটা অ্যানালিসিস, ডিজিটাল মার্কেটিং, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি)।
২. দেশের শীর্ষ কোম্পানিগুলোকে ক্যাম্পাসে এনে ক্যারিয়ার ফেস্টের আয়োজন, যাতে শিক্ষার্থীরা সরাসরি চাকরির সুযোগ পান।
৩. শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাকাডেমিক ইন্টার্নশিপে স্থায়ী ব্যবস্থা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি।
৪. উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সার হতে ইচ্ছুকদের জন্য উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা মেলা আয়োজন।
৫. অ্যালামনাই ও শিল্পখাতের পেশাজীবীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালু।
৬. ডিজিটাল রিসোর্স হাব তৈরির উদ্যোগ, যেখানে চাকরির তথ্য ও ক্যারিয়ার টিপস পাওয়া যাবে।
৭. বিভাগগুলোতে ব্যবহারিক দক্ষতামূলক কোর্স চালুর প্রস্তাব।
৮. বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপের প্রস্তুতিতে সহায়তা, সাবেক শিক্ষার্থী ও বিশেষজ্ঞদের দিয়ে কর্মশালা।
৯. প্রতিটি বিভাগে ঐচ্ছিক ভাষা শিক্ষার কোর্স যুক্ত করা।
১০. আন্তর্জাতিক কোলাবোরেশন ও স্কলারশিপ ভিত্তিক গবেষণার সুযোগ তৈরি।
১১. বিসিএস ও ব্যাংকিংসহ সরকারি চাকরিমুখী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সেমিনার আয়োজন।
১২. সার্টিফিকেটসহ খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের আয় ও অভিজ্ঞতার পথ তৈরি।
সুর্মীর নির্বাচনী পরিকল্পনা-
অন্যদিকে, সুর্মী চাকমা গত ২৭ আগস্ট নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেন। তাঁর ঘোষিত পরিকল্পনায় রয়েছে—
১. পর্যাপ্ত ক্যাফেটেরিয়া স্থাপন ও বিদ্যমান ক্যাফেটেরিয়াগুলোতে ন্যায্যমূল্যে মানসম্পন্ন খাবার নিশ্চিত করা।
২. প্রতিটি অনুষদ ও ক্যান্টিনে সুপেয় পানির ব্যবস্থা।
৩. বিদ্যমান কমনরুমের পরিবেশ ও স্যানিটেশন উন্নয়ন এবং তা PWD শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাক্সেসিবল করা।
৪. শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক কমনরুম, ইনডোর গেমস ও বই পড়ার ব্যবস্থা।
৫. কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও বিজ্ঞান লাইব্রেরি ডিজিটালাইজেশন এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল বই ও অডিওবুক সুবিধা।
৬. চারুকলা অনুষদে একটি স্টেশনারি স্থাপন।
৭. আদিবাসীদের প্রধান উৎসবগুলোকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে ছুটি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।
৮. শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনে প্রশাসনের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা।
৯. বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণাভিত্তিক, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র ও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তোলা।
রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা ও সুর্মী চাকমা সকলের দোয়া, আশীর্বাদ, সহযোগিতা ও সমর্থন প্রত্যাশা করেছেন।
ডাকসুর ২৮ পদে প্রার্থী ৪৭১ জন, এর মধ্যে নারী প্রার্থী ৬২ জনঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এবার ডাকসুর ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী আছেন ৬২ জন।
গত ২৬ আগষ্ট মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী সিনেট চৌধুরী ভবনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের সামনে এক ব্রিফিং করেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, ডাকসু নির্বাচনে ২৮ জন প্রার্থী তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। এ ছাড়া প্রাথমিক বাছাই প্রক্রিয়ায় বাদ পড়া ১০ জন প্রার্থী আপিল না করায় তাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে চূড়ান্তভাবে ৪৭১ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, ডাকসুতে ৪৭১ প্রার্থীর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ১১ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৪ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১৯ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১২ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৩ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৭ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ১৫ জন, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক পদে ১১ জন, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ ছাড়া ১৩টি সদস্য পদে ২১৭ জন প্রার্থী হয়েছেন।
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় দেখা গেছে, এবার ডাকসুর বিভিন্ন পদে ৬২ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। যাঁদের মধ্যে ভিপি পদে ৫ জন, জিএস পদে একজন, এজিএস পদে ৪ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ২ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১ জন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ৩ জন, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে ২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৩ জন, সাহিত্য ও সংস্কৃতিক পদে ২ জন, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক পদে ৩ জন এবং সদস্য পদে ২৫ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন।