প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ১৪, ২০২৫, ৮:০২ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ৭, ২০২৫, ৩:৩৮ এ.এম
লামায় মিথ্যা মামলা ও হয়রানির বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে জয় পেলেন ভূমিহীন পরিবার
লামা(বান্দরবান) প্রতিনিধি।।
দীর্ঘ ৪০-৪৫ বছর ধরে ভোগদখল করে আসা ভিটেমাটির ওপর মিথ্যা মামলা ও হয়রানির বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে জয় পেলেন বান্দরবানের লামা উপজেলার ভূমিহীন ও অসহায় একটি পরিবার। গত ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আদালত-০১, বান্দরবান পার্বত্য জেলা, অসহায় পরিবারটির পক্ষে ন্যায়সঙ্গত রায় প্রদান করেন।মামলার বাদী ছিলেন দিল মোহাম্মদ (৪৮), যিনি বিঘার পর বিঘা জমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও ভূমিহীন ওমর ফারুকের পরিবারের সামান্য ঝুপড়ি ঘরের দিকে লোলুপ দৃষ্টি দেন। পশ্চিম রাজবাড়ীর ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওমর ফারুক (৪০), তার পরিবার ও স্বজনেরা মিলে প্রায় ৪০/৫০ বছর ধরে ২৯৩নং ছাগলখাইয়া মৌজার ২য় শ্রেণীর পাহাড়ি ৭/৮ শতক জমিতে একটি জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে আসছেন। এই সামান্য জমিটুকুই তাদের একমাত্র আশ্রয়।
দিল মোহাম্মদ হয়রানির উদ্দেশ্যে মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার বিবাদী করা হয় ওমর ফারুক, তার ভাই আরব আলী, মা ছেনোয়ারা বেগমসহ মোট পাঁচজনকে।মামলা দায়েরের পর আদালত সহকারী কমিশনার (ভূমি), লামাকে সরেজমিন তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য, যা ভূমিহীন পরিবারটির দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করে।তদন্তে যা জানা যায়: বিবাদীগণ (ওমর ফারুকের পরিবার) দীর্ঘ ৪০-৪৫ বছর যাবত বিরোধীয় জমিতে শান্তিপূ্র্ণভাবে দখলে আছেন।বিবাদীগণের পিতা ও স্বামী প্রায় চার দশক পূর্বে তাদের সকল সম্পত্তি বিক্রি করে ভূমিহীন হয়ে পড়লে উক্ত জমিতে ঝুপড়ি ঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন।স্থানীয় উপস্থিত লোকজন সুস্পষ্টভাবে জানান যে, বাদী দিল মোহাম্মদ পূর্বে কখনো বিরোধীয় জমিতে দখলে ছিলেন না। বাদীর দাবিকৃত জমি ১ম শ্রেণীর হলেও বিবাদীর দখলকৃত জমিকে ২য় শ্রেণীর পাহাড়ি জমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সরেজমিনে বাদী ও বিবাদীর জমির শ্রেণীগত কোনো মিল পাওয়া যায়নি।তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে, বিবাদীগণ জমিটিকে 'খাস' দাবি করলেও তাদের কাছে দখলের কোনো দলিলপত্র নেই। তবে তাদের দীর্ঘদিনের দখলস্বত্বই তাদের পক্ষে যায়।উভয় পক্ষের বক্তব্য এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ৩০/০৯/২০২৫ তারিখে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আদালত-০১ একটি যুগান্তকারী আদেশ প্রদান করেন। আদালতের এই ন্যায়সঙ্গত আদেশে সাজানো মিথ্যা অভিযোগের মুখোশ উন্মোচিত হয় এবং অসহায় ভূমিহীন পরিবারটি তাদের দীর্ঘদিনের দখলস্বত্ব ফিরে পায়।মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির শিকার ওমর ফারুকের পরিবার আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। স্থানীয় ভূমিহীন মানুষেরা এই রায়কে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে নিপীড়িত গরিব মানুষের এক বড় জয় হিসেবে দেখছেন।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত