||এস.কে খগেশপ্রতি চন্দ্র খোকন, বাংলাদেশঃ||
দুর্গাপুজা শেষ হয় বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে। দশমীর মধ্যে মন খারাপ, কষ্ট, আবেগ লুকিয়ে রয়েছে। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে বাপের বাড়ি ছেড়ে কৈলাসে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন দেবী দুর্গা। সেই কারণে এই তিথিকে বিজয় দশমী বলা হয়।
রীতি, রেওয়াজ মেনে মহাষষ্ঠী থেকে মহানবমী পেরিয়ে দশমীতে এসে উপস্থিত। আর দশমী মানেই মন খারাপের পালা। ঘরের মেয়ে উমার কৈলাসে ফিরে যাওয়ার সময়। আর দশমী মানেই সিঁদুর খেলা, মিষ্টি মুখ।
বিজয়া দশমীঃ বিজয়া দশমী (সংস্কৃত: विजयदशमी) প্রতি বছর নবরাত্রির বা দুর্গাপূজার শেষ একটি প্রধান হিন্দু উৎযাপন। এটি হিন্দু বর্ষপঞ্জির আশ্বিন বা কার্তিক মাসে দশম দিনে পালন করা হয়, মাস দুটি হিন্দু চান্দ্র-সৌর বর্ষপঞ্জির যথাক্রমে ষষ্ঠ এবং সপ্তম মাস, যা সাধারণত গ্রেগরিয়ান মাস সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরে পড়ে।
অঞ্চলের উপর নির্ভর করে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে দুর্গা বা রামের বিজয়কে বিজয়া দশমী হিসাবে উদ্যাপন করা হয়।
অন্য নামঃ দশহরা, দশেরা, নবরাত্রি
পালনকারীঃ হিন্দু।
ধরনঃ ধর্ম, সংস্কৃতি।
তাৎপর্যঃ অশুভর উপর ভালোর জয়কে
উদ্যাপন করে।
উদযাপনঃ দুর্গাপূজা বা রামলীলা এর সমাপ্তি চিহ্নিত করে।
পালনঃ মণ্ডপগুলি (পর্যায়ে), নাটক, জনসাধারণের সমাবেশ, ধর্মগ্রন্থ এর আবৃত্তি, পূজা, উপবাস, দুর্গা বিসর্জন বা রাবণ পোড়ান।
তারিখঃ আশ্বিন (সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর)
বিজয়াদশমী বিভিন্ন কারণে পালিত হয় এবং ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৃথক পৃথক ভাবে উদযাপিত হয়।
বাংলাদেশের দক্ষিণ, পূর্ব, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের কয়েকটি উত্তর ভারতীয় রাজ্যে বিজয়াদশমী ধর্ম পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষার জন্য মহিষাসুরের বিরুদ্ধে দেবী দুর্গার জয়কে স্মরণ করে দুর্গাপূজার সমাপ্তি চিহ্নিত করে। উত্তর, মধ্য ও পশ্চিম ভারতীয় রাজ্যগুলিতে, উৎসবটি ‘বিজয়াদশমী’ শব্দের প্রতিশব্দ দশেরা নামে অভিহিত হয় (দাসরা, দশাহরা)।
এই অঞ্চলগুলিতে এটি “রামলীলা”-এর সমাপ্তি চিহ্নিত করে এবং রাবণের উপর রামের বিজয়ের কথা স্মরণ করে। খুব একই উপলক্ষে, অর্জুন একাই এক হাজারেরও বেশি সৈন্যকে ধ্বংস করেন এবং ভীষ্ম, দ্রোণ, অশ্বত্থামা, কর্ণ এবং কৃপ সহ সমস্ত কুরু যোদ্ধাকে পরাজিত করেন, যা মন্দের প্রতি মঙ্গল অর্জনের এক তাৎপর্যপূর্ণ উদাহরণ। বিকল্পভাবে, এটি দেবী, যেমন দুর্গা বা সরস্বতীর জন্য শ্রদ্ধার পরিচয় দেয়।
বিজয়াদশমী উদ্যাপনের মধ্যে একটি নদী বা মহাসাগরের সম্মুখভাগে শোভাযাত্রার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা পূজার সঙ্গে জড়িত সঙ্গীত ও মন্ত্র সহ দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকের মাটির মূর্তি বহন করে এবং শোভাযাত্রার শেষ মূর্তিগুলি জলে বিসর্জন দেওয়া হয়। অন্য কোথাও, দশহরাতে রাবনের মূর্ত প্রতীকগুলি দুষ্টের প্রতীক হিসাবে আতশবাজি দিয়ে পোড়ানো হয় এবং এটি অশুভ শক্তির ধ্বংসকে চিহ্নিত করে। এই উৎসবটি গুরুত্বপূর্ণ আলোর উৎসব দীপাবলির ও দেওয়ালীর প্রস্তুতিও শুরু করে, যা যথাক্রমে বিজয়াদশমীর ১৯ দিন ও ২০ দিন পরে পালিত হয়।
বিজয়া দশমী তো পালন করছেন? কিন্তু কেন বিজয়া বলে? দশমীতে কী হয়েছিল? জানুন সেই কাহিনিঃ
দুর্গাপুজা শেষ হয় বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে। দশমীর মধ্যে মন খারাপ, কষ্ট, আবেগ লুকিয়ে রয়েছে। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে বাপের বাড়ি ছেড়ে কৈলাসে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন দেবী দুর্গা। সেই কারণে এই তিথিকে বিজয় দশমী বলা হয়।
রীতি, রেওয়াজ মেনে মহাষষ্ঠী থেকে মহানবমী পেরিয়ে দশমীতে এসে উপস্থিত। আর দশমী মানেই মন খারাপের পালা। ঘরের মেয়ে উমার কৈলাসে ফিরে যাওয়ার সময়। আর দশমী মানেই সিঁদুর খেলা, মিষ্টি মুখ। কিন্তু এই দশমীর তাৎপর্য অনেকেরই অজানা।
দশমীর আগে আমরা বিজয়া যোগ করি কেন? এর পেছনেও রয়েছে পৌরাণিক গল্প। কথিত আছে, মহিষাসুরের সঙ্গে নয় দিন নয় রাত্রি যুদ্ধ করার পর দশম দিনে তার বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন দেবী দুর্গা। নারী শক্তির জয়লাভকেই বিজয়া বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই নিয়ে আবার দ্বিমতও রয়েছে। শ্রী চণ্ডীর কাহিনি অনুসারে, দেবী আবির্ভূত হন আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে। আর মহিষাসুরকে বধ করেন শুক্লা দশমীতে। তাই এই দশমীর দিনকে বিজয়া বলে চিহ্নিত করা হয়।
উত্তর ভারতে দশমীকে ‘দশেরা’ বলা হয়। দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় দশেরা এবং রাবণ বধ পালিত হয়। বাল্মীকি রচিত রামায়ণে কথিত আছে, আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে রাবণ বধ করেছিলেন রাম। রাবণ বধের পর ৩০তম দিনে অযোধ্যা প্রত্যাবর্তন করেন সস্ত্রীক রামচন্দ্র। তাই এই দিনটিকে দশেরা হিসেবে পালন করা হয়
হাজার ব্যাখ্যা এবং পৌরাণিক মতামত, সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়ে বাঙালি কিন্তু মেতে ওঠে শুধুমাত্র দুর্গাপুজো নিয়ে। দশমী মানেই দুর্গা পুজোর অবসান। বিষাদের সুর বাজে সকলের মনে। মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়। চলে একে অপরকে আলিঙ্গন, মিষ্টি মুখ।
‘আসছে বছর আবার হবে’ এই আশা নিয়েই দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানো হয়।