লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি
লামা উপজেলায় সৈয়রাম ত্রিপুরা (৪৬) নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আপন এক ছোট ভাইকে মারধর করে উল্টো ছোট তিন ভাইকে মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তায় নয়, জাল দলিলে বাগান দখল করতে না পেরে সৈয়রাম ত্রিপুরা জন্মদাতা বাবাকেও লাঞ্চিত করেছেন বলে অভিযোগ উঠে। উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের গতিরাম ত্রিপুরা পাড়াস্থ হানিচরণ ত্রিপুরার সৃজিত বাগানে ঘটনাটি ঘটে। এসব ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ছেলে সৈয়রাম ত্রিপুরাসহ সাত জনকে বিবাদী করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন বাবা হানিচরণ ত্রিপুরা।
অভিযোগে জানা যায়, গতিরাম পাড়ার বাসিন্দা মৃত আছাদ আলী ত্রিপুরার ছেলে হানিচরণ ত্রিপুরার বহু কষ্টে অর্জিত ফলজ বনজ বাগান রয়েছে উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের গতিরাম ত্রিপুরা পাড়ায়।

গত কয়েক বছর ধরে এ বাগানের উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে তার বড় ছেলে সৈয়রাম ত্রিপুরার। হানিচরণ ত্রিপুরার ওই বাগান দেখাশুনার জন্য দায়িত্ব দেন ছোট ছেলে থারমেন ত্রিপুরাকে। এ প্রেক্ষিতে প্রতিদিনের মত গত ১০ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে হানিচরণের ছেলে থারমেন ত্রিপুরা বাগানের জঙ্গল পরিস্কার করতে থাকেন। এ সময় পূর্ব থেকে ওঁতপেতে থাকা বড় ভাই সৈয়রাম ত্রিপুরা ও তার সম্মন্ধি মেসেহা ত্রিপুরাসহ ৬-৭ জন জঙ্গল পরিস্কারে থারমেন ত্রিপুরাকে বাঁধা প্রদান করেন। প্রতিবাদ করলে সৈয়রাম ত্রিপুরারা মারধর করেন থারমেন ত্রিপুরাকে। এ ঘটনার তিনদিন পর শনিবার সকাল ১০টার দিকে বাবা হানিচরণ ত্রিপুরা গতিরাম ত্রিপুরাপাড়া থেকে বিলছড়ি হেব্রণ মিশনস্থ বাসায় যাওয়ার সময় সৈয়রাম ত্রিপুরা গতিরোধ করে লাঞ্চিত করেন। পরবর্তীতে এসব ঘটনাকে আড়াল করতে ছোট তিন ভাই কর্তৃক সৈয়রাম ত্রিপুরাকে মারধর করার নাটক সাজিয়ে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না গিয়ে কৌশলে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা পত্র নিয়ে ১১ ডিসেম্বর লামা থানায় ছোট তিন ভাই প্রণয়, বিনয় ও থারমেন ত্রিপুরাকে বিবাদী করে মারধর করার অভিযোগ এনে লামা থানায় মামলা করেন। ২০২২ সালেও সৈয়রাম ত্রিপুরা বাগান দখল করতে না পেরে তার ছোট ভাই প্রণয় ত্রিপুরা, বিনয় ত্রিপুরা ও বাবা হানিচরণ ত্রিপুরাকে প্রাণ নাশের হুমকি দেন। এ বিষয়ে থানায় জিডি (জিডি নং ৬৬৬, তারিখ- ১৭/৫/২০২২) করা হয়।
অভিযুক্তের বাবা হানিচরণ ত্রিপুরা বলেন, আমার চার ছেলে। প্রণয়,বিনয়, থারমেন ও সৈয়রাম ত্রিপুরা। এর মধ্যে সৈয়রাম ত্রিপুরা সবার বড়। গত কয়েক বছর আগ থেকে আমার সৃজিত একটি বাগানের উপর সৈয়রাম ত্রিপুরার লোলুপ কু দৃষ্টি পড়ে। সে একাই ওই বাগান ভোগ করতে চায়। আমি বাগান তাকে দিতে রাজি না হওয়ায় সৈয়রাম ত্রিপুরা জাল দলিল সৃজনসহ একের পর এক ষড়যন্ত্র করে চলেছে। আমার সৃজিত বাগান তার বলে দাবি করে। তিনি জানান, গত ১০ ডিসেম্বরের ঘটনার সময় আমার ছেলে প্রণয় বিলছড়িস্থ হেব্রণ মিশনে ও বিনয় ত্রিপুরা বান্দরবান সদরের বাসায় ছিলেন। অথচ মারধরের ঘটনায় তাদেরকেও আসামী করা হয়েছে। আমি এহেন ষড়যন্ত্র ও হয়রানি মূলক মামলা থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তিনি আরও বলেন, গত ১৩ ডিসেম্বর শনিবার সকালে আমি গতিরাম পাড়া থেকে হেব্রণ মিশনস্থ বাসায় যাওয়ার সময় ছেলে সৈয়রাম ত্রিপুরা আমাকে লাঞ্চিত করে মারধর করে। এতে আমি পায়ের গোড়ালিতে ব্যাথা পাই।
এদিকে প্রণয় ও বিনয় ত্রিপুরা জানায়, ১০ ডিসেম্বরের ঘটনায় আমরা ঘটনাস্থলে ছিলাম না। অথচ আমাাদেরকে উদ্দেশ্য মূলকভাবে মামলায় বিবাদী করেছেন সৈয়রাম ত্রিপুরা। আমাদের ভাই থারমেন ত্রিপুরাকে মারধর করে উল্টো তাকেসহ আমাদেরকে আসামী করে মামলা করার কোন যুক্তি নেই।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত সৈয়রাম ত্রিপুরা বলেন, আমি বাবাকে মেরেছি, এ ঘটনা মোটেও সত্য নয়। কোন ছেলে জন্মদাতা বাবাকে মারতে পারেনা। বরং আমি আমার বাগান দেখতে গেলে আমার ছোট ভাইরা আমার উপর আক্রমন চালায়। এতে আমি আহত হই। বর্তমানে আমি ঢাকায় আছি।
এ বিষয়ে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ শাহজাহান কামাল জানান, বৃদ্ধ হানিচরণ ত্রিপুরার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।